স্পিরুলিনার উপকারিতা সম্পর্কে ডাক্তাররা বলেন, শৈবালের মধ্যে তিনটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যঃ স্পিরুলিনা ( এটি আকর্ষণীয় নিল লেটসের প্রধান উপাদান), এএফএ এবং ক্লোরেলা। এদের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি এবং রয়েছে প্রোটিন, লৌহ,পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম,জিংক এবং ভিটামিন বি”।
১. চমৎকার পুষ্টিগুনঃ
স্পিরুলিনা প্রোটিন এবং ভিটামিনের পরিপূরক । এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ১ টেবিল চামচ বা ৭ গ্রাম শুকনো স্পিরুলিনার উপকারিতা এর মধ্যে রয়েছেঃ.
★ ২০ ক্যালরি
★ ৪.০২ গ্রাম প্রোটিন
★ ১.৬৭ গ্রাম শর্করা
★০.৫৪ গ্রাম চর্বি
★৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
★ ২ মিলিগ্রাম লোহা
★১৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম
★৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস
★ ৯৫ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম
★৭৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম
★ ০.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
আরও আছে থাইমিন, নিয়াসিন, রিবোফ্লেভিন, ফোলেট, ভিটামিন বি-৬, এ এবং কে । অর্থাৎ স্পিরুলিনা একটি সুষম খাদ্য।
২. ওজন কমাতে স্পিরুলিনার উপকারিতা
ক্যালোরি খাওয়ার তুলনায় খরচ বেশি করলে ওজন কমে। স্পিরুলিনাতে ক্যালরি কম থাকে।অল্প পরিমাণ স্পিরুলিনায় অনেক পুষ্টি রয়েছে। দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় স্পিরুলিনা থাকলে ওজনও কমে, পুষ্টিও পরিপূর্ণ হয়।
২০১৬ ডবল ব্লাইন্ড প্লেসবো কণ্ট্রোলড ট্রায়ালের ফলাফল হতে জানা যায় যে স্পিরুলিনা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ গবেষণায় দেখা যায়, যারা মোটা ছিল, ৩ মাস নিয়মিত স্পিরুলিনা খাওয়াতে তাদের বডি মাস ইনডেক্স( বিএমআই) উন্নত হয়।
৩. পাকস্থলী ভালো রাখতে স্পিরুলিনার উপকারিতা
স্পিরুলিনা খুব নরম তাই সহজে হজম হয়। কিন্তু এটি খেলে কি পাকস্থলী ভালো থাকবে?
মানুষের উপর গবেষণা চলছে, কিন্তু পশুর উপর গবেষনা থেকে জানা গেছে যে বয়স বৃদ্ধির সাথে অন্ত্র ভাল রাখায় স্পিরুলিনা সাহায্য করে। ২০১৭ সালে বৃদ্ধ ইঁদুরের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বয়স বৃদ্ধির সাথে স্পিরুলিনা অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়াগুলো কে সংরক্ষণ করে।
স্পিরুলিনা তেমন আশযুক্ত নয় তাই অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এমন আশঁযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা অত্যাবশ্যকীয়।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্পিরুলিনার উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্পিরুলিনার উপকারিতা অনেক।কিন্তু এর উপর আরো গবেষণা প্রয়োজন।
২০১৮ সালের একটি গবেষনা পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে যারা নিয়মিত স্পিরুলিনা খায় খালি পেটে তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কম থাকে। যাদের টাইপ ১ এবং ২ ডায়াবেটিস খালি পেটে তাদের রক্তে শর্করার পরিমান সাধারনত অনেক বেশি থাকে। এ থেকে বোঝা যায় স্পিরুলিনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে স্পিরুলিনার উপকারিতা অনেক।
২০১৭ সালে পশুর উপর হওয়া একটি গবেষনাও সমর্থন করে যে স্পিরুলিনা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এ গবেষনায়, গবেষকগন টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একটি ইদুঁরকে স্পিরুলিনার রস খাইয়ে দেন। ফলস্বরূপ ইদুঁরটিতে প্রকাশ পায়ঃ
- রক্তে শর্করার পরিমান কম
- ইনসুলিনের পরিমান বেশি
- উন্নত লিভার এনজাইম
গবেষকদের মতে, টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় স্পিরুলিনার আ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রভাব থাকতে পারে।
৫. কোলেস্টেরল কমাতে স্পিরুলিনার উপকারিতা
স্পিরুলিনার রস কোলেস্টেরল লেভেল কমায় । কোলেস্টেরল হল মানুষের রক্তে থাকা চর্বি যাকে চিকিৎসকগন হৃদরোগের জন্য দায়ী বলে মনে করেন। ২০১৬ সালের একটি পর্যবেক্ষণ এবং মেটা-বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে স্পিরুলিনা রক্তের লিপিডের সাথে প্রতিক্রিয়া করে এবং মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে। এটি এলডিএল যা হল “ক্ষতিকর” কোলেস্টেরল, তার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে এইচডিএল যা হল “ভালো” কোলেস্টেরল তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
২০১৩ সালের একটি গবেষণা এই ফলাফলকে সমর্থন করে। গবেষকগণ দেখেন যে একজন মানুষ যদি প্রতিদিন ১ গ্রাম করে স্পিরুলিনা খায় তবে ৩ মাস পর তার কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস পায়।
৬. রক্তচাপ কমাতে স্পিরুলিনা
উপরের আলোচনা অনুযায়ী স্পিরুলিনা কোলেস্টেরল কমাতে পারে এবং এরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে এটি মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ২০১৬ সালের একটি ছোট পরিসরের গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে যাদের ওজন অনেক বেশি এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তিন মাস নিয়মিত স্পিরুলিনা খেলে তাদের রক্তচাপ কমে আসে।
৭.হৃদরোগ প্রতিরোধে স্পিরুলিনা
উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল লেভেল উভয়ই হৃদরোগের কারন। যেহেতু স্পিরুলিনা এই উভয় কারণকে কমাতে পারে, এর দ্বারা হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৮.বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধিতে স্পিরুলিনার উপকারিতা
স্পিরুলিনা বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি করে । বিপাকক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পেলে শক্তি বাড়ে। এটি প্রতিদিনের ক্যালরির ব্যবহার বাড়ায় যা ওজন কমাতে সহায়তা করে।
২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যে সকল মানুষ প্রতিদিন ৬ গ্রাম করে স্পিরুলিনা খায় তদের বিপাকক্রিয়া ভালো এবং ওজন কমে। তারা সুস্বাস্থ্য লাভ করে।
এই গবেষণাটি করা হয়েছিল তাদের উপর যাদের নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ রয়েছে, এছাড়াও স্বাভাবিক মানুষের দেহে বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধিতে স্পিরুলিনার প্রভাব জানার জন্য আরো গবেষণা করা প্রয়োজন।
৯. এলার্জির লক্ষণ কমাতে স্পিরুলিনার উপকারিতা
পরাগরেণু, ধুলাবালি অথবা পোষা প্রাণী থেকে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার কারণে নাকের ভিতর ফুলে ওঠে। এই প্রতিক্রিয়া কে এলার্জিক রাইনাইটিস বলে। স্পিরুলিনা এ প্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে।
২০১৩ সালের একটি গবেষণা বলে স্পিরুলিনা নাকের ভেতরের যন্ত্রণা এবং শরীরে হিস্টামিনের পরিমাণ কমায়। অন্য কোন ঔষধের তুলনায় স্পিরুলিনা এলার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণ গুলো কমাতে বেশি কার্যকরী। লক্ষণগুলো হলোঃ
- নাক দিয়ে পানি পড়া
- হাঁচি
- নাক বন্ধ থাকা
- চুলকানো
২০১১ সালের একটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় স্পিরুলিনা এলার্জিক রাইনাইটিস কমাতে পারে। এর অনেক প্রমাণ রয়েছে, কিন্তু আরো অনেক পরীক্ষা করতে হবে।
১০. স্পিরুলিনার অ্যান্টিটক্সিক কার্যাবলী
দূষিত পদার্থ সেবনের ফলে মানুষের মধ্যে বিষক্রিয়া হয়। গবেষণায় দেখা যায় যে এই বিষক্রিয়ার চিকিৎসায় স্পিরুলিনা ব্যবহার করা যায়।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যে স্পিরুলিনার কিছু অ্যান্টিটক্সিক বৈশিষ্ট্য আছে যা শরীরের দূষিত পদার্থ গুলো নিবারণ করে, যেমনঃ
- আর্সেনিক
- ফ্লোরাইড
- লোহা
- সীসা
- মার্কারি
গবেষকরা বলেন বিষক্রিয়া রোধে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার পাশাপাশি স্পিরুলিনাও একটি উপকারী উপাদান।
১১. মানসিক সুস্বাস্থ্য রক্ষায় স্পিরুলিনার উপকারিতা
২০১৮ সালের একটি প্রকাশনী মানসিক ব্যাধির চিকিৎসায় স্পিরুলিনার স্পিরুলিনার উপকারিতা এর
মূলকথা হলো স্পিরুলিনা ট্রিপটোফ্যানের একটি উৎস। ট্রিপ্টোফ্যান হলো একটি অ্যামাইনো এসিড যা সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। সেরোটোনিন মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যে সকল মানুষের বিষন্নতা এবং অস্থিরতা থাকে তাদের মধ্যে সেরোটোনিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ট্রিপ্টোফ্যান যুক্ত খাবার খেলে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেরোটোনিন উৎপন্ন হয়, যা মানসিক সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
স্পিরুলিনার আসল ভূমিকা জানতে আরো ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
স্পিরুলিনার কি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ঝুঁকি রয়েছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) স্পিরুলিনা খাওয়ার অনুমতি দেয় না, কিন্তু ২০১৪ সালের একটি পর্যবেক্ষনে দেখা যায় যে স্পিরুলিনা বেশিরভাগ মানুষের জন্য সহনীয় তাই এটি তেমন কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ঘটায় না।
স্পিরুলিনার বা নতুন কোন খাবার খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে তার ঔষধি গুণাবলীর সম্পর্কে জেনে নেয়া ভালো ।
স্পিরুলিনা কে খাদ্যতালিকায় কিভাবে যোগ করতে হবে?
স্পিরুলিনা গুঁড়ো বা ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়।
গুড়ো হিসেবে একেঃ
- স্মুদিতে যোগ করা যায়, যা এই পানীয়টিকে একটি সবুজ রঙ দেয়
- সালাদ বা সুপের উপরে ছিটিয়ে
- অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপকরণের সাথে মিশিয়ে, এনার্জি বল তৈরি করে
- ফল বা সবজির রসের সাথে এক টেবিল চামচ পরিমাণ মিশিয়ে খাওয়া যায়
ট্যাবলেট আকারেও মানুষ স্পিরুলিনা খেতে পারে।
বিভিন্ন দোকান অথবা অনলাইন বাজার থেকে স্পিরুলিনা গুড়ো কেনা যায়। খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান এবং অনলাইনে স্পিরুলিনা ট্যাবলেটও পাওয়া যায়।
সার-সংক্ষেপ
পূর্বগবেষণা থেকে বলা যায় স্পিরুলিনা নিম্নোক্ত জিনিসগুলোর জন্য ভালোঃ
- অন্ত্রের স্বাস্থ্য
- বহুমূত্র রোগের ব্যবস্থাপনায়
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
- কোলেস্টেরল কমানো
- হৃদরোগের ঝুঁকি
- বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি
- এলার্জির লক্ষণ কমানো
- মানসিক সুস্বাস্থ্য
দীর্ঘমেয়াদী আর্সেনিক দূষণের চিকিৎসায় জিংকের মত স্পিরুলিনাও উপকারী।
স্বাস্থ্যরক্ষায় স্পিরুলিনা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়ার আগে চিকিৎসকদের আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।
4 Comments
That is a great detailed writing i have ever read about spirulina. And easily described one also. HopeIt will be available in Bangladesh, very soon.
Nice Bro
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি
[…] পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি […]