স্পিরুলিনা কি?
স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি ও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। স্পিরুলিনা হল সুতার মত ভাসমান ক্ষুদ্র শৈবাল যা ক্ষারীয় পানিতে জন্মে। অনেক শতাব্দি যাবৎ মধ্য আফ্রিকায় এটি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কারন এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। এখন খাদ্য হিসেবে স্পিরুলিনা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। স্পিরুলিনা গুড়ো, ফ্লেক্স বা ট্যাবলেট আকারেও পাওয়া যায়।
স্পিরুলিনা গুড়ো এবং ফ্লেক্সগুলোকে সাধারণত জুস এবং স্মুদির সাথে খাওয়া হয়। স্পিরুলিনা শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে যদি একে অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাওয়া হয়।
স্পিরুলিনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি?
১. ফিনাইলকিটোনইউরিয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলে
ফিনাইলকিটোনইউরিয়া একটি জিনগত সমস্যা যাতে রোগী ফিনাইলএলানিন হাইড্রক্সিলেজ নামক এনজাইমের অভাবে ফিনাইলএলানিন নামক অ্যামিনো এসিডকে হজম করতে পারেনা।
ফলে বিকাশে সময় লাগা, খিচুনী, অস্থিরতা এবং অক্ষমতার মত লক্ষণ দেখা যায়। দুর্ভাগ্যবশত স্পিরুলিনা ফিনাইলএলানিনের একটি খুব ভাল উৎস। এটি খেলে ফিনাইলকিটোনইউরিয়া আরো বেড়ে যায়।
স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি ফিনাইলকেটোনুরিয়ার লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তোলে।
২. অটোইমিউন রোগ বাড়িয়ে তোলে
যখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি করে তখন অটোইমিউন রোগ তৈরি হয়।ফলে কোন না কোন অঙ্গের ক্ষতি হয় অথবা ব্যথা অনুভব হয়। বাত, অ্যাজমা, পিরিয়ডোনটাইটিস, ভ্যাটিলিগো, টাইপ 2 ডায়াবেটিস, একাধিক স্ক্লেরোসিস, সোরিয়াসিস এবং রক্তাসল্পতা অটোইমিউ রোগের কয়েকটি উদাহরণ। স্পিরুলিনা, একটি বহিরাগত জীব। তাই যখন এটি খাওয়া হয়, তখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বেশি সচল হয়ে যায়। যা শরীরের ক্ষতি করে এবং অটোইমিউন রোগগুলোকে বাড়িয়ে তোলে।
৩. স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি ঔষধের কাজে বাধা দেয়
স্পিস্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করতে পারে। তাই এটি বিভিন্ন ঔষধের কাজেও বাধা দিতে পারে। বিশেষত ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট ঔষধের কাজে বাধা দিতে পারে। যদি কেউ ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট খায় তবে তার কখনোই স্পিরুলিনা খাওয়া উচিত নয়। কারন এটি ঔষধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিবে, যা জটিল সমস্যা তৈরী করতে পারে।
৪. ভারী ধাতব বিষক্রিয়ার ঝুঁকি
স্পিরুলিনার কিছু প্রজাতিতে ভারী ধাতব পদার্থের চিণ্হ পাওয়া যায় যেমন পারদ, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, সীসা। দীর্ঘদিন যাবত এরকম দুষিত স্পিরুলিনা খেলে কিডনি, লিভারের ক্ষতি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায়, শিশুরা ভারী ধাতবের বিষক্রিয়ায় মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকে।এটি স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি এর অন্যতম অংশ।
৫. স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি কিডনি জটিলতা তৈরি করে
দেহে স্পিরুলিনার প্রোটিন হজম হয়ে প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়া তৈরি করে যা ইউরিয়াতে পরিণত হয়। এটি কিডনিতে অতিরিক্ত চাপ ফেলে রক্ত থেকে বেশি পরিমাণে ইউরিয়া বের করার জন্য, শেষ পর্যন্ত কিডনির ক্ষতি হয় এবং কিডনি অকার্যকরও হয়ে যেতে পারে। এত বেশি ইউরিয়ার কারণে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে।
৬. স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি এর অন্যতম হল শরীর ফুলে যাওয়া এবং ওজনের প্রচুর হ্রাসবৃদ্ধি
স্পিরুলিনা ভিটামিন, প্রোটিন এবং খনিজ দিয়ে ভরাপুর। কিডনি সুস্থ্য না হলে রক্ত থেকে অপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলো বের করে আনতে পারে না। স্পিরুলিনায় প্রচুর আয়োডিন থাকে। একদিকে যেমন স্পিরুলিনা থেকে আয়োডিন পাওয়া যায় অন্যদিকে এটি থাইরয়েড এবং প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিগুলোর ক্ষতি করতে পারে। এটি বেশি দেখা যায় তাদের মধ্যে যাদের হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম আছে। রক্তে খনিজ বৃদ্ধির কারনে বগলে তরল জমতে থাকে, ক্যালসিয়াম,ফসফেট,আয়োডিনের শোষণে ভারসাম্যহীনতা হয় ও হঠাৎ ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়, ঝিমুনি আসে এবং হৃদরোগ দেখা য়ায।
৭স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি কারনে বদহজম এবং বমি বমিভাব হয়
স্পিরুলিনা খেলে অনেক সময় পেট ফেঁপে উঠতে পারে, বমি বমি ভাব এবং অ্যানাফিল্যাক্সিস হতে পারে- বিশেষত প্রথমবার খাওয়ার পর। স্পিরুলিনার যে সকল জাতগুলো সংক্রমিত থাকে বিভিন্ন দুষিত পদার্থ যেমন মাইক্রোসিসটিন(নীল-সবুজ শৈবাল দ্বারা উৎপন্ন বিষ) দ্বারা, এরা বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে যেমন গ্যাস্ট্রিক, তীব্র পানিশূন্যতা এবং বদহজম।
৮. স্পিরুলিনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া উদ্বেগ এবং মোটর স্নায়ুর রোগের কারণ (এমএনডি)
যে সকল স্পিরুলিনা বন্য উৎস যেমন দীঘি, পুকুর, জন্জাল সমুদ্র থেকে সংগ্রহ করা হয় সেগুলো বিষাক্ত হয় এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখায়। এরা নিউরোটক্সিক রাসায়নিক যেমন বিটা- মিথাইলঅ্যামিনো-L-অ্যালানিন(বিএমএএ) তৈরী করে, যেটা অনেক নিউরোডিজেনারেটিভ সমস্যা তৈরি করতে পারে যেমন মোটর স্নায়ুরোগ (এমএনডি), অ্যামায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস), আলযেইমারস, পার্কিনসনস, উন্মাদ, উদ্বেগ এবং ঘুমহীন রাত (অনিদ্রা)।
৯. গর্ভবতী এবং নতুন মা দের জন্য স্পিরুলিনার ক্ষয়ক্ষতি
গর্ভবতী এবং নতুন মা দের উপর স্পিরুলিনার প্রভাব সঠিক ভাবে জানা যায়নি। সুতরাং তাদের জন্য স্পিরুলিনা না খাওয়াই ভালো বা খেলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, যেন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারনে কোন ক্ষতি না হয়। শিশুদের এ জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে রাখা উচিত কারণ এতে তাদের অ্যালার্জি বা আরও মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
সংক্ষেপে
শৈবাল হলেও স্পিরুলিণা শরীরের জন্য অনেক উপকারী, এটি সঠিক মাত্রায় খাওয়া জরুরি। শুধু সঠিক মাত্রাই নয়, এটি কোন উৎস থেকে আসে তাও জরুরি।এ বিষয়ে নিম্নোক্ত জিনিসগুলো জানা প্রয়োজন,
- জৈব রাসায়নিক গঠন (সহ-বিদ্যমান অণুজীব)
- জলের মধ্যে কী ধরনের নিষ্কাশন ঘটে
- প্রবাহগুলো নিষ্কাশিত হবার আগে পরিক্ষিত হয় কিনা
- স্থানীয় সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য
- পানির উৎসের মান নিয়ন্ত্রন কিভাবে করা হয়
স্পিরুলিনার উপকারিতাগুলো সর্বধিক পরিমানে লাভ করার জন্য এর ব্যাপারে বিশদভাবে জানতে হবে যেন এর মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো এড়ানো যায়।
মনে রাখতে হবে স্পিরুলিনার মাত্রা এবং শরীরের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে চিকিৎসককে জানিয়ে রাখতে হবে। যদি উপরোক্ত কোন লক্ষণ ধরা পরে, তবে স্পিরুলিনা খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
No Comments